২০১১ সালের ৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল যার বিচার কার্যের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার শুরু করে তিনি হচ্ছেন ‘দেইল্লা রাজাকার’ খ্যাত এই দেলোয়ার হোসেন সায়িদী I হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট– ভাংচুর, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো ২০ টি মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড ঘটানোর অভিযোগ উত্থাপন করা হয় ট্রাইবুনালে I এই সকল অভিযোগের মধ্যে ৮টি অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয় ২০১৩ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারির রায়ে I সাইদীকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয় ২টি গুরুতর অপরাধের দায়ে I কি সেই অপরাধগুলো ? ? ?
.
১৯৭১ সালের ৪ মে পিরোজপুর সদর থানার মাসিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পেছনে জমায়ত একদল নিরস্র লোকের সন্ধান জানিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সেখানে নিয়ে আসে এবং ২০ জন নাম না জানা নিরস্র ব্যক্তিকে সেখানে নিজ হাতে গুলি করে মারে সায়িদী নিজে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে (অভিযোগ ১) I ওই একইদিনে সায়িদী তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে মাছিমপুর হিন্দুপাড়া ঘেরাও করে ঘরবাড়ি লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ ঘটায় I সেই গ্রামের ভয়ার্ত অস্রহীন মানুষ জীবনবাঁচাতে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে পালতে শুরু করলে তাদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে সায়িদীর সাঙ্গপাঙ্গরা খুন করে ১৩ জনকে (অভিযোগ – ২) I খুন হওয়া ব্যক্তিদের নামগুলো উল্লেখ করলে যে কারো মনেই ঢং করে একটা ঘন্টা বেজে উঠবে I হত্যাকৃত ব্যক্তিরা হলেন শরৎ চন্দ্র মন্ডল, বিজয় মিস্ত্রি, উপেন্দ্রনাথ, যোগেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি, সুরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি, মতিলাল মিস্ত্রি, যজ্ঞেশ্বর মন্ডল, সুরেশ মন্ডল এবং আরো ৫জন নাম না জানা ব্যক্তি I একটি বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে কি ‘হালাল‘ রাষ্ট্র করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেমেছিলেন সায়িদী? এই প্রশ্ন আমার মনে জাগে, আর দশটা ‘স্বাভাবিক‘ (ধর্মান্ধ নয় যারা) মানুষের মনে জাগে কিনা জানি না I
.
সেই একদিনের ঘটনা, পাকবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে সায়িদী মাছিমপুরের হিন্দুপাড়ায় গিয়ে মনিন্দ্র পশারী ও সুরেন্দ্রচন্দ্র মন্ডলের বাড়ি লুটপাট করে অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করে দেয় I তারপর সায়িদী সরাসরি নিজেই বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে রাস্তার পাশের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ দিয়ে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ চালায় (অভিযোগ–৩) I কালীবাড়ি, মাছিমপুর, পালপাড়া, শিকারপুর, রাজারহাট, কুকারপাড়া, ডুমুরতলা, কালামতলা, নওয়াবপুর, আলমকুঠি, ডুকিগাথি, পাড়েরহাট ও চিংড়াখালী হচ্ছে সেদিন ধ্বংস হওয়া গ্রামগুলোর মধ্যে কয়েকটি I গ্রামগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো যেন সেদিনের সেই ধ্বংসযজ্ঞের তিব্রতা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে সহজ হয় I এই অভিযোগে স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে যে ধর্মীয় কারণে এই আক্রমণ চালানো হয় I অভিযোগ –৪ হচ্ছে যে, একইদিনে সায়িদী তার দলবল ও পাকবাহিনী নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার উদ্দেশে সদরথানার এলজিইডি ভবনের পেছনে ধোপাবাড়ির সামনে হিন্দুপাড়ায় নাম না জানা অনেক নিরীহ, হিন্দু, বেসামরিক মানুষদের ওপর অঝোরে গুলি বর্ষণ করে, যা গণহত্যার পর্যায়ে পরে I
.
৫ই মে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান, পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ এবং ভারপ্রাপ্ত এসডিও আব্দুর রাজ্জাককে কর্মস্থল থেকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে মৃতদেহ বলেশ্বর নদে ফেলে দেয়া হয় কারণ তারা স্বাধীনতার পক্ষে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধে অংশগ্রহণে ঊদ্বুদ্ধ করতে সর্বদলীয় সংগ্রামী পরিষদ গঠন করে I এই তিন বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তাকে অপহরণ ও হত্যায় সায়িদী সরাসরি অংশ নেয় যা মানবতাবিরোধী অপরাধ (অভিযোগ ৫) I
.
৭ই মে শান্তি কমিটির একদল সদস্য সায়ীদির নেতৃত্বে পিরোজপুর সদরের পাড়েরহাট গিয়ে পাকিস্তানীবাহিনীকে সেখানে স্বাগতম জানায় এবং সেখানকার আওয়ামীলীগ নেতা, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের বসতি ও দোকানপাট চিনিয়ে দেয় I তারপর সেইসব জায়গায় হানা দিয়ে লুটপাট করে বাড়িঘর ও দোকানপাট আগুনে জ্বালিয়ে দেয় (অভিযোগ– ৬) I যার মধ্যে উল্লেখ করা হয় মুকুন্দ লাল সাহার দোকান থেকে বাইশ সের স্বর্ণ ও রুপা সায়িদী দ্বারা লুট হওয়ার কথা I
.
৮ই মে পাকবাহিনীকে সাথে নিয়ে সাঈদী সদর থানার ভাদুরিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম সেলিমের বাড়িতে যায় I সেখানে সেই মুক্তিযোদ্ধার পিতা নুরুল ইসলাম খানকে সায়িদী আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে পাকবাহিনীকে পরিচয় দেয় এবং তাকে আটক করে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয় যারা তাকে নির্যাতন করে I সেই বাড়ি লুটপাট করার পর তাতেও অগ্নিসংযোগ দিয়ে নিঃশেষ করে দিয়ে যায় (অভিযোগ ৭) I ওইদিনই চিতলিয়া গ্রামের মানিক সারির বাড়িতে হানা দিয়ে মফিজ উদ্দিন ও ইব্রাহিম সহ ২ ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায় সায়ীদির নেতৃত্বে ও পাকবাহিনীর সহায়তায় সায়ীদির সাঙ্গপাঙ্গরা পাঁচটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটায় সায়ীদির প্ররোচনায় সেনাক্যাম্পে ফেরার পথে ইব্রাহিমকে হত্যা করে তার মৃতদেহ ব্রিজের পাশে ফেলা হয় এবং মফিজকে ক্যাম্পে নিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয় (অভিযোগ ৮) I
.
সায়ীদির নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২ই জুন তার অস্রধারী সহযোগীরা পাকবাহিনীর সাথে ইন্দুরকানী থানার নলবুনিয়া গ্রামের আব্দুল হালিম বাবুলের বাড়িতে মূল্যবান দ্রব্বাদী লুট করে অগ্নিসংযোগে সব ছাই করে দেয় (অভিযোগ– ৯) I তারপর ওই থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুসম্প্রদায়ের ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ দেয় সায়ীদির সঙ্গীরা I তার কুপ্ররোচনায় বিসাবালীকে নারিকেল গাছে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে (অভিযোগ–১০) I এরপর টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে হানা দিয়ে সায়িদী নগদ টাকা, অলংকারাদি ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং মুক্তিযোদ্ধার বড়ভাই আব্দুল মজিদ হাওলাদারকে নির্যাতন করে (অভিযোগ ১১) I
.
যুদ্ধ চলাকালীন সায়ীদির নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র দল একটি হিন্দুপাড়ায় ঢুকে ১৪ জন হিন্দুকে আটক করে এক দড়িতে বেঁধে পাকবাহিনীর হাতে নিয়ে হস্তান্তর করে I পরে যাদের হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়া হয় (অভিযোগ ১২) I একরাতে সায়িদী পাকবাহিনীকে সাথে নিয়ে নলবুনিয়া গ্রামের আজহার আলীর বাড়িতে হানা দিয়ে আজহার আলী ও তার ছেলে সাহেব আলীকে নির্যাতন করে ও পরে সাহেব আলীকে অপহরণ করে তার মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেয় (অভিযোগ ১৩) I
.
মুক্তিযুদ্ধ প্রায় শেষদিকে এমন এক সকালে দেইল্লা রাজাকার তার ৫০–৬০ জনের রাজাকার দল নিয়ে হোগলাবুনিয়ার একটি হিন্দুপাড়ায় হানা দেয় I সেখানে বাকিরা সবাই আগেই পালিয়ে গেলেও শেফালী ঘরামী ও মধুসূদন ঘরামী রাজাকারদের হাতে আটক হয় এবং তারা শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণ করে I দলনেতা হওয়ার দরুন সায়িদী এই ধর্ষণে কোনো বাধা প্রদান করে নাই I পরে তারা পুরো হিন্দুপাড়া আগুনে ছাই করে দিয়ে যায় (অভিযোগ ১৪) I হোগলাবুনিয়ার ১০ জন হিন্দু ব্যক্তিকে সায়িদী ও তার দল আটক করে পাকবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করে যাদের পরে খুন করে নদীতে ফেলে দেয়া হয় (অভিযোগ ১৫) I পাড়েরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোনকে তুলে নিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দেয় সায়িদী ও তার রাজাকারের দল I সেই তিনবোনকে পাকবাহিনী তিনদিন পর্যন্ত ধর্ষণ করে তারপর ছেড়ে দেয় (অভিযোগ ১৬) I একই গ্রামের বিপ্লব সাহার মেয়েকে তার বাড়িতে আটক রেখে নিয়মিত সেখানে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে সায়িদী ও তার ১০– ১২ জনের সশস্র রাজাকার দল (অভিযোগ ১৭) I মুক্তিযোদ্ধাদের পাকবাহিনী সম্পর্কে তথ্য দেয়ার অভিযোগে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে কাজ করা ভাগীরথী নাম এক নারীকে নির্যাতন করে সায়িদী এবং তাকে খুন করে মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয় (অভিযোগ ১৮) I এছাড়াও ১০০/ ১৫০ জন হিন্দুকে জোর করে সায়িদী ধর্মান্তরিত করায় (অভিযোগ ১৯) I
.
নভেম্বরের শেষদিকে ইন্দুরকানী গ্রামের তালুকদার বাড়িতে হানা দিয়ে সায়িদী ও তার দল ৮৫ জনকে আটক করে ও সেখানে লুটপাট করে এবং আটকৃতদের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায় I ঘুষের বিনিময়ে ১০ –১২ জন ছাড়া বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয় I আটকৃত পুরুষদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় আর নারীদের পাকবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয় যারা সেখানে ধর্ষণের শিকার হন (অভিযোগ ২০) I (Dhaka Tribune, 2023) (নিলয়, 2023) (The Guardian , 2011)
.
পিরোজপুরের ৮১ বছর বয়সী মধুসূদন ঘরামীর সাক্ষ্য অনুযায়ী, তিনি বাড়ি ফেরার পর, তার ক্রন্দনরত স্ত্রী তাকে বলেন যে, যেই দেইল্লা রাজাকার (দেলোয়ার হোসেন সায়িদী) মধুসূদন ঘরামীকে জোর করে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে সেই রাজাকার এসেছিলো তার বাড়ি এবং তাকে ধর্ষণ করেছে I এই যন্ত্রনা তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না I তিনি তার স্বামীকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যেতে বলে! কিছুদিন পর তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হয়ে যান এবং কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ! কিন্তু পাড়াপ্রতিবেশীর কানাঘুষা সইতে না পেরে তিনি তার কন্যা সন্তানকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান ! তারপর মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী আর ফিরে আসেনি এবং বিগত ৫০ বছর ধরে মধুসূদন ঘরামী এই যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছেন (আলোকিত সিরাজগঞ্জ, ২০২০)!
.
১৯৭১ এর ১৯ এ ডিসেম্বর দেইল্লা রাজাকার বোরকা পরে পালিয়ে যান এবং তার অপরাধের ঘটনাগুলো ছড়িয়ে পড়লে তিনি পরিবার সমেত আত্মগোপন করেন, পরবর্তীতে ১৯৭৫ এ ১৫ অগাস্ট এর পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন ঘটলে আত্মগোপন অবস্থা থেকে বের হয়ে মওলানা পরিচয় নিয়ে ওয়াজ মাহফিল শুরু করেন I
.
এইতো সেদিনের কথা ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে জড়ো হয়ে হাজারো তরুণ বাঙালিপ্রেমী নির্ভয়, জোরালো কণ্ঠে একাত্তরের দেল্লু রাজাকারের মৃত্যুর দাবিতে স্লোগান দিয়েছিলাম, আর আজ কেউ কি পারবে সেই শাহবাগ চত্বরে দাঁড়িয়ে দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে ‘রাজাকার‘ বলতে ? তারপর সেখান থেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে?? ২০১৩ সালের সেই গণজাগরণ মঞ্চ থেকে দেইল্লা রাজাকারের ফাঁসির দাবির স্লোগান দিয়ে অনেকেই নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারিনি, আর আজ ১০ বছর পর পুরো দেশটাই হয়ে গেছে ধর্মীয় জাগরণের মঞ্চ, যেখানে সায়ীদির মতো বাকপটু লোক ধর্ম জ্ঞানের নামে অন্ধত্ব, হিংসা, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ, সংঘাত ভরে দিয়েছে মানুষের মনে I আজ যার মৃত্যুতে কোনো বাঙালি জোর গলায় বলছে না যে একজন রাজাকারের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু হাজারে হাজারে মানুষ যার জানাজায় অংশ নিয়েছে আর বলছে ‘’কোরানের পাখি আর নেই’’, যাদের অবিচলিত বিশ্বাস যে তাদের পবিত্র আল্লামা ‘’নিঃস্বন্দেহে বেহেস্তে গেছেন’’I দেইল্লা রাজাকার যে শুধু নিজেকে আল্লামা সায়িদিতে রূপান্তর করেছে তা নয়, বাংলাদেশের অসম্প্রদায়িকতার ভীত টাকে পুরোপুরি ঘুনেখাওয়া করে দিয়ে ধর্মীয় অন্ধত্বের বাণিজ্যের ব্যাপ্তি ঘটিয়ে গেছে সেই অধ্যায়ঃ নিম্নে তুলে ধরা হলো:
.
১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করা দেলোয়ার হোসেন সায়িদী পারিবারিক তথ্যমতে পড়াশুনা করেছেন গ্রামের মক্তবে, এরপর তিনটি ভিন্ন মাদ্রাসায় I তার গ্রামের লোকদের ভাষ্যমতে উনার পিতা গ্রামের একজন সামান্য গৃহস্থ ছিল, জমি–জিরাত ছিল তবে কোনো নামকরা উচ্চ বংশীয় পরিবার নয় I উনাকে সবাই দেলোয়ার হোসেন নামেই চিনতো এবং তাদের জানামতে সায়িদীর বংশের নাম শিকদার বংশ, উনার নাম সায়িদী কিভাবে হলো তা তাদের অজানা এবং পড়াশুনা শেষে সায়িদী গ্রামের বাজারে কিছুদিন ব্যবসা করেছেন বলে তারা জানিয়েছেন (BBC NEWS Bangla, 2023) (আলোকিত সিরাজগঞ্জ, ২০২০) I তবে তার ছেলে মাসুম সায়ীদির ভাষ্যমতে ‘সায়িদী‘ তাদের পারিবারিক উপাধি I তার বাবা একজন লেখক ছিলেন যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে খুলনা–যশোরে বসবাস ও ব্যবসা করতেন কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি পুরোদস্তুর লেখালেখি শুরুকরেন এবং কোরানের দাওয়াত দেয়াকে নিজের মিশন হিসেবে নেন (BBC NEWS Bangla, 2023) I কিন্তু কিছু ইসলামী অনলাইন পেজের তথ্যমতে উনার পিতা একজন স্বনামধন্য ইসলামী পন্ডিত ছিলেন এবং বাবার প্রতিষ্ঠা করা মাদ্রাসায় তালিম নেয়ার মদ্ধ দিয়েই সায়েদীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং ”দায়ী ইলাল্লাহ” হিসেবে তিনি আত্মনিয়োগ করেন ১৯৬৯ সাল থেকে (ইসলামিক বই সমাহার , 2023) (Azhari, 2023) I
.
BBC NEWS Bangla (2023) এর তথ্যঅনুযায়ী, তিনি দেশজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন আশির দশকের শুরুর দিকে, মাসুম সায়ীদির ভাষ্যমতে তার পিতা ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে প্রথম ওয়াজ মাহফিল করেন I ধর্ম প্রচারে তার ভূমিকা ইসলামী অনলাইন পেজ (Azhari, 2023) (ইসলামিক বই সমাহার , 2023)থেকে হুবুহু নিম্নে তুলে ধরা হলো :
যদিও তার দাখিল পাশ করা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় তার আল্লামা উপাধি ভুয়া বলেই দাবি করা হয় (রায়, 2013) I কিন্তু আজকের এই দিনে দাঁড়িয়ে কার গলায় জোর আছে যে সায়িদী কে দেল্লু রাজাকার বা ভুয়া বলে ডাকার ?? শুধু তাই নয়, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে জমাকৃত আয়–ব্যায়ের হিসেবে সায়িদী দেখান যে তার মোট সম্পত্তির মূল্য ৮০ লক্ষ্য পনেরো হাজার সাতশো সতেরো টাকা অথচ তৎকালীন মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংক–এর দ্বারা প্রকাশকৃত একটি ফোনালাপে সায়িদী তার আইনজীবীর কাছে স্বীকার করেন যে তার ব্যাংকে কয়েকশো কোটি টাকা রয়েছে যা নির্বাচন কমিশনের কাছে তিনি চাপিয়ে গেছেন (আলোকিত সিরাজগঞ্জ, ২০২০) I ১৯৮৯ সালের দিকে সকল মহল থেকে বিরোধিতার দরুন সিলেট থেকে সাইদীকে বিতাড়িত করা হয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সায়ীদির ওয়াজ মাহফিল করার অনুমতি উঠিয়ে নেয়া হয় (নজরুল, ১৯৮৯ ) I ২০০৬ সালে ইংল্যান্ড এ গিয়ে সায়িদী এমন বক্তব্য দেন যে ” ইংল্যান্ড ও আমেরিকা তে বোমা মারা একদম সঠিক ! ইংল্যান্ড বোমা খাওয়া ডিসার্ব করে ”! যার দরুন ইংল্যান্ডের স্বনামধন্য পত্রিকাতে এবং পার্লামেন্টও দাবি উঠে সায়িদী কে ব্যান করার জন্য (UK Parliament , 2007) (MCKIVERGAN, 2006)
.
যে আজ ধর্মীয় পবিত্র গ্রন্ধের অনুরাগী, সে তার মানুষ খুনের রক্তে মাখা হাত দিয়ে কি করে স্পর্শ করে একটি পবিত্র গ্রন্ধ??? নাকি পানি দিয়ে ওযু করে খুনের দায় থেকেও নিজেকে পবিত্র করে ফেলেছেন?? প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থানে উনি যে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে নিঃস্বন্দেহে উনি ধর্মীয় ভেদাভেদের কথা বলেছেন I উনি হয়তো বলেছেন যে ধর্ম রক্ষায় কারো হত্যা করলে তা জায়েজ I হয়তো এও বলেছেন মুসলিম মুসলিম ভাই–ভাই, বাকিরা সবাই কাফের I এসব কথা বলে তিনি যথাযোগ্য ধর্মীয় জ্ঞানহীন মানুষের মনে ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার, ভুল শিক্ষা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছেন আর নিজের এত্ত এত্ত অনুসারীর দল তৈরী করেছেন I আজ তার মৃত্যুতে যে এত্ত ভাঙচুর হলো এত্ত জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হলো সেগুলো যারা করলো তারা বেশিরভাগই জামাতে ইসলামের সদস্য যারা ধর্মকে রুজি করে রাজনীতি খেলার জন্য পরিচিত এবং যেই দলটি গড়েই উঠেছে মূলত একাত্তরের রাজাকারদের নিয়ে I
.
সায়েদী খুব ভালোভাবেই বুঝেছিলো যে মানুষের একমাত্র ভয়ের জায়গা হলো তার মৃত্যু, আর মৃত্যুর পরের অজানা রহস্য I পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বহু ঘটনা রয়েছে ধর্মকে পুঁজি করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করার I সায়েদী তাই করেছে, নিজের হিংস্র মগজটা সাদা টুপির নিচে ঢেকে, নিজের পৈশাচিক চেহারা কাজল, সুরমা আর গোফ দিয়ে নূরানী করে, ধর্মীয় উক্তি মুখস্থ বুলি ছেড়ে মানুষকে তাদের বর্তমান আর ভবিষতের ভাবনায় এতটাই উন্মাদিত করে দিয়েছে যে কেউ সেই ব্যক্তির অতীতের দিকে তাকানোর সুযোগ বা সাহস পায়নি I হয়তোবা নিজের কৃতকর্মকে ধর্মীয় ব্যাখ্যার গেড়াকলে ফেলে অন্যায় কে ন্যায় করে দিয়েছে, কালোকে সাদা করার মতো, ধর্মের নামে নিরীহ লোকদের হত্যা করা জায়েজ হওয়ার মতো I
.
অধিকাংশ মুসলিমের যে কোরান সম্পর্কে জ্ঞান কম আজ সায়েদী হয়ে উঠতে পেরেছে সেই ‘কোরানের পাখি‘ I স্বধর্মীও ভিনদেশি ভাইদের পক্ষ নিয়ে নিজের দেশের কয়েক হাজার মানুষের হত্যার, ধর্ষণের কারণ হয়ে তিনি আজ স্বধর্মীও বিভিন্ন বড় বড় রাষ্ট্রে রাজকীয় আতিথেয়তা লাভ করেছেন I একাত্তরে অমুসলিমদের লুট করেছে আর তারপর ধর্ম চর্চার নামে অমুসলিমদের প্রতি হিংসা চর্চা করিয়ে খোদ স্বধর্মীয়দের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে নিজের শত কোটির পাহাড় গড়ে কোরানের পাখি হয়েছে I অথচ বিভিন্ন মাওলানাদের মতে কোরানের তফছির এর বিনিময়ে অর্থগ্রহন নাকি ইসলামধর্মের সাথে সঙ্গতি প্রকাশ করে না (নজরুল, ১৯৮৯ )I যে বাংলার নারীদের পরের দেশের পিশাচ দের হাতে উলঙ্গ করে দিয়েছে সেই আজ ওই একই বাংলার নারীদের পর্দার আড়ালে থাকার কোরানিক শিক্ষা দিয়েছে I ন্যায়– অন্যায়, সত্য ধারণা, মাতৃভূমি প্রেম, বাস্তব জ্ঞান সব কিছু ব্যাতিরেকে দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ একটা সম্প্রদায়েকে শুধু ভুল–ভাল ধর্মীয় জ্ঞানের মায়াজালে বন্দি করে দিয়েছে যা থেকে নিস্তার পাওয়া খুবই কঠিন, কারণ কোরানের পাখি ডিম্ পেরে বাচ্চা ফুটিয়ে রেখে গেছে I
.
References
Azhari, M. R., 2023. আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জীবনী, s.l.: MizanurRahmanAzhariWaz.com.
BBC NEWS Bangla, 2023. দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যেভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন, Dhaka: BBC NEWS Bangla.
Dhaka Tribune, 2023. যেসব অভিযোগে বিচার হয়েছিল যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর, Dhaka: Dhaka Tribune.
MCKIVERGAN, D., 2006. Britain’s Galloway Sinks Even Lower, s.l.: Washington Examiner.
The Guardian , 2011. Bangladesh party leader accused of war crimes in 1971 conflict, s.l.: The Guardian .
UK Parliament , 2007. Commons Chamber, Volumn 467. [Online]
Available at: https://hansard.parliament.uk/Commons/2007-11-14/debates/64fcd6b6-17ae-4863-8ea0-41ddf20847ac/CommonsChamber
[Accessed 20 8 2023].
আলোকিত সিরাজগঞ্জ, ২০২০. সাঈদীনামা: দেলু শিকদার থেকে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, s.l.: আলোকিত সিরাজগঞ্জ.
ইসলামিক বই সমাহার , 2023. ইসলামিক বই সমাহার. [Online]
Available at: https://www.islamicboisomahar.in/delwar-hossain-sayeedi-books/
[Accessed 19 August 2023].
নজরুল, আ., ১৯৮৯ . সায়িদী সমাচার I একজন ধর্ম ব্যাবসায়ীর উত্থান , s.l.: সাপ্তাহিক বিচিত্রা.
নিলয়, স., 2023. সাঈদীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, Dhaka: BDNews24.Com.
রায়, অ., 2013. দেইল্লা রাজাকার থেকে আল্লামা সাঈদী!, s.l.: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.
19 Responses
এই কুওার বাচ্চা আল্লাহকে নিয়ে বিরুদ্ধে কিছু লিখলে তার পরিণতি কিন্তু ভালো হবে না।
আর যেনও কোথায় পাহাড় ধস এর ঘটনায় কেউ যেনও মারা না যায়।
একজন ব্লগার এর লেখাকে আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়।
নাস্তিক এর বাচ্চা তোর এই লেখা আমার কাছে সন্দেহ মনে হচ্ছে
শহিদুল ইসলাম এর ঘটনায় সত্যি অনেক খারাপ লাগছে
শহিদুল ইসলামে ঘটনাটি সত্যি আমার কাছে অনেক খারাপ লাগছে।
আমার মনে হয় সে তার নিজের কুকর্ম কারণে তাকে আজ জেলে যেতে হয়েছে।
hauar pula madarchud,go and fuck yourself , bloody wenker
ভাই আপনার এই কথার সাথে আমি একমত কারণ বাংলাদেশ সরকার নারীদেরকে দিন দিন পুরুষের চাহিদা মেটাতে নারীদেরকে বিদেশ গমন করতে হচ্ছে। যা খুব লজ্জাজনক।
তোকে এ বিষয়ে নাক গলাতে কে বলছে নাস্তিক এর বাচ্চা।
তুই এ বিষয়ে নাক গলাতে আসছিস কেনো তকে।বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে লেখার তর এতো বর সাহস কোথায় থেকে আসে।
কুওার বাচ্চা তুই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্দে কথা বলছিস কেনো।তুই কে।
এই ব্লগারের বাচ্চা তুই কে তর পরিচয় কি।তোকে আমি খুন করবো।
মালাউনের বাচ্চা মুসলিমদের প্রতি তোর এতো হিংসা কেনো।
নাস্তিক মুক্তমনা ব্লগার দের বাংলাদেশ থেকে এদের বিতাড়িত করা হউক।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিনীত আবেদন নাস্তিক ব্লগারদের এই বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করা হউক।
মুক্তমনা ব্লগাররা হুশিয়ার হয়ে যা।তোকে হত্যা করতে বেশি সময় লাগবে না আমার।
বাংলাদেশে আজ দিন দিন ধর্ষন এর উৎপাত সৃষ্টি হচ্চে।আমি মনে করি এই সব কিছু ব্লগার নাস্তিকদের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ যতই এগিয়ে যাক না কেন।ধর্ষণ কিন্তু থেমে থাকবে না।