জঙ্গিবাদ একটি ত্রাসের নাম, যাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি রাষ্ট্র কে যে কোনো উপায়ে কট্টরপন্থী ইসলাম ধর্মের নিয়ন্ত্রণে নেয়া ও পরিচালনা করা I বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও সেখানে সংখ্যাগরিষ্ট গোষ্ঠী হচ্ছে ইসলাম ধর্মানুসারী, এবং কিছু স্বার্থবাদী দলের চেষ্টাই ছিল পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম–পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশ রূপে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়তে না দেয়া যেটাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু আজ তারা হাজারো গুন্ শক্তি, সামর্থ, জনবল, ধর্মীয় অন্ধত্ব, আধুনিক যন্ত্রাদি ও হিংস্রতা নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন –এ পরিণত করতে I
.
বিশ্লেষকদের ধারণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করে আশির দশক থেকে কারণ তখন আফগান থেকে ফেরত আশা মুজাহিদিন বাংলাদেশিরা এই রাষ্ট্রকে ইসলামের আদলে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় I তবে ‘মুসলিম মিল্লাত বাহিনী’ নামে একটি সংগঠিত জঙ্গিবাহিনীর নাম ১৯৮৬ সালে প্রথম শোনা যায় যাদের কিছু ফিলিস্তিন সদস্য পুলিশি অভিযানে মারা যায় ও কিছু গ্রেপ্তার হয় তারপর এই সংগঠনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় (ইসলাম, ২০২৩) I
.
যশোরের আব্দুর রহমান ফারুকী সোভিয়েত– আফগান যুদ্ধ থেকে ফিরে ১৯৮৯ সালে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম বাংলাদেশ (হুজি –বি) প্রতিষ্ঠা করে যাকে বাংলাদেশের ‘ফার্স্ট জেনারেশন‘ জঙ্গি সংগঠন বলা হয় (ইসলাম, ২০২৩) (ইনসাইড বাংলাদেশ, ২০১৯) I এই হুজি– বি ১৯৯৯ সালে সাহিত্যিক শামসুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা করে, তারপর ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে যাতে হামলাকারীসহ ১০জন নিহত হয় এবং ২০০৪ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীন দলের সহযোগিতায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালায় (ইনসাইড বাংলাদেশ, ২০১৯)I
.
বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত জঙ্গি সংগঠন হচ্ছে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) যা শায়খ আব্দুর রহমান ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করে কিন্তু যার শীর্ষস্থানীও নেতা ছিল সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলার ভাই I ২০০১ সালে সাতক্ষীরায় একটি সিনেমা হলে ও সার্কাস প্যান্ডেলে বোমা হামলার মধ্যে দিয়ে যাদের উত্থান I রাজশাহীতে কথিত চরমপন্থীদের ২০০৪ সালে নৃশংসভাবে খুন করে I ২০০৫ সালে দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে ৫০০ টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় I ২০০৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে নভেম্বরে ‘’মানুষের বিচার করতে পারে একমাত্র আল্লাহ’’- এই বক্তব্য রেখে দুইজন বিচারককে খুন করে I ২০০৭ সালে বাংলা ভাই সহ ৬ জঙ্গির ফাঁসি দেয়া হয়I জেএমবি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো ধারণা করা হলেও তারা ২০১৪ সালে সাজাপ্রাপ্ত ৩ আসামিকে ছিনতাই ও এক পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন করে নিজেদের অস্ত্বিতের আভাস দেয় I
.
নিষিদ্ধ হওয়া আরও কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন হলো, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এটিবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ ( জেএমজেবি), শাহাদাত–ই–আল হিকমা ও হিজবুত তাহ্রীর I এছাড়াও হিজবুল মুজাহিদিন, আল্লাহর দল, শহীদ হামজা ব্রিগেড, হিজবুত তাওহীদ, আল হিকমা, তাআমির উদ্দিন, লস্কর–ই–তৈয়বা, আসিফ রেজা কমান্ড ফোর্স, জয়শ– ই– মুহাম্মদ, ইসলাম ও মুসলিম, তাসাউফ মহল, আনসার–আল–ইসলাম, ইসলামিক সলিডারিটি ফন্ট, তৌহিদী ট্রাস্ট, শাহাদাত–ই– নবুয়ত, জামাত–আস–সাদাত, জামিউ–তুল–ফালাহ, আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, আরাকানস পিপলস আর্মি, আরাকান মুজাহিদ পার্টি, মিয়ানমার লিবারেশন ফোর্স, রোহিঙ্গা লিবারেশন ফোর্স, রোহিঙ্গা ইনডিপেনডেন্স পার্টি, রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট, মুসলিম মিল্লাত, আল হারাত আল ইসলামিয়া, ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট, জুমা‘অতুল আল সাদাত, তামীরুদ্দীন দ্বিন বাংলাদেশ, আল খিদমত, হিজবুল মাহ্দী, হিজবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, দাওয়াতী কাফেলা, বাংলাদেশ এন্টি টেরোরিস্ট পার্টি, আল মারকাজুল আল ইসলামী, আল ইসলাম মার্টেনস ব্রিগেড, সত্যবাদ, মুসলিম মিল্লাত, শরিয়া কাউন্সিল, জমিয়ত আহলে হাদিস আন্দোলন, আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ, তাজির বাংলাদেশ, হায়াতুর ইলাহা, ফোরকান মুভমেন্ট, জামিউতুল এহজিয়া এরতাজ, (সুলতান, ২০২১)তাজিম, এশার বাহিনী, আল ফাহাদ, হরকাতুল মুজাহিদিন ও জাদিদ আল কায়দা নামে বিভিন্ন উগ্র মৌলবাদী সংগঠন জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে (ইনসাইড বাংলাদেশ, ২০১৯), (হীরা, ২০১৬)I ২০১৪ এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪০ টি (বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ২০১৪), ২০১৬ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০ টি (হীরা, ২০১৬) ও সর্বশেষ ২০১৯ এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ৫০ টি (ইনসাইড বাংলাদেশ, ২০১৯) জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে I
.
সম্প্রতি কোনো কার্যকলাপ চোখে না পড়লেও এই সংগঠনগুলো যে কোনো ভাবেও সক্রিয় রয়েছে এবং অনলাইন এর মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ জারি রেখেছে I বিশ্লেষকদের মতানুযায়ী, যেহেতু শুরু থেকেই এই দেশের জঙ্গিবাদ আফগান ও তালেবান মতাদর্শে প্রভাবিত তাই তাদের উত্থান বা পতন আমাদের দেশের জঙ্গিবাদে বিশেষ ভূমিকা রাখে I বর্তমানে আলোচিত তিনটি সক্রিয় সংঘঠনগুলোর মধ্যে নব্য জেএমবি আইএস– এর মতাদর্শ অনুসরণ করে, আর আল কায়েদা কে অনুসরণ করে জেএমবি ও আনসার–আল–ইসলাম I এমনকি জেএমবি ও নব্য জেএমবির মূল নেতারা বিদেশ থেকে দলের পরিচালনা ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে (সুলতান, ২০২১)I
.
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারকাজ শুরু হলে, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ, মূলত অসম্প্রদায়িক ও অহিংস্র চেতনাসমৃদ্ধ নাগরিকের দল রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে অহিংস আন্দোলন শুরু করে I যেহেতু যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আসামিদের অনেকেই ইসলামভিত্তিক দল গুলোর উচ্চপর্যায়ের নেতা তাই এই আন্দোলনের জবাব দিতে কট্টরপন্থী মৌলবাদী দল যারা বাংলাদেশকে ইসলামের আইনে পরিচালিত করতে চায় তারা সহিংস প্রতিরোধ শুরু করে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে অংশ নেয়া ধর্মনিরপেক্ষ কিছু ব্লগারদের তারা নাস্তিক বলে ঘোষণা দেয় ও হত্যা করা শুরু করে I ইসলামের হেফাজতকারী বলে স্বঘোষিত একটি দল ঘোষণার মধ্যদিয়ে ৮৪ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে যাদের বেশিরভাগই ধর্মনিরপেক্ষবাদী (BBC News, 2015), এদের মধ্যে ৯ জনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং অন্যরা নানাভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছে I
.
উগ্রপন্থীদের হিটলিস্টের শীর্ষে থাকা স্বঘোষিত নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দিনকে ২০১৩ সালে ১৫ জানুয়ারি ছুরিকাঘাত করা হয়, যদিও সেযাত্রায় তিনি বেঁচে যান (Islam, 2013)I ১৫ ই ফেব্রুয়ারি আরেকজন নাস্তিক ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে তার বাসার নিকটে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার দেহকে ছিন্নভিন্ন করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় (BBC News, 2015) I ৭ই মার্চ সানিউর রহমান নামের গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী ও জামায়াতে ইসলামীর মতো বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের সামলোচনাকারীকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয় (Shuvo, 2021)I রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বাউল মতবাদের অনুসারী শিক্ষক শফিউল ইসলাম, বাসায় ফেরার পথে কিছু তরুনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করে (The Straits Times, 2014) I
.
অভিজিৎ রায়, একজন মার্কিন প্রকৌশলী, বিখ্যাত লেখক ও ব্লগার, ২০১৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন (Prothom Alo, 2015) (Dearden, 2015)I তিনিই ‘মুক্তমনা’ ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তমনায় লিখালিখি করেই তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করেন I সরকারের সেন্সরশিপ ও ব্লগারদের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্দোলনের ব্যাবস্থায়ক তিনি I বিজ্ঞান বিষয়ক তার ১০টি বই প্রকাশিত হয় I ওয়াশিকুর রহমান নামের আরেকজন মুক্ত ও প্রগতিশীল চিন্তার ব্লগার ৩০ শে মার্চ রাতে অভিজিৎ রায়ের মতো খুন হন (Chowdhury & Shams, 2015) I অনন্ত বিজয় দাস, উগ্রমৌলবাদীদের তালিকায় থাকা আর একজন মুক্তমনা নাস্তিক ব্লগার, যিনি বিজ্ঞানের ওপর, বিবর্তনের ওপর ও সোভিয়েত উনিয়নের বিপ্লবের ওপর তিনটি বই লিখেছেন, সিলেটের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রধান ছিলেন I পূর্ব সতর্কতা হিসেবে সুইডিশ পেন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কিন্তু সুইডেনের সরকার তার ভিসা নাকচ করে দেয় তিনি আর দেশে ফিরবেনা এই শংকায় I ২০১৫ সালের ১২ ই মে মুখোশপরা ৪জন অস্রধারীর হামলায় তিনি নিহত হন (Ahmed, 2015) I
.
নিলয় চ্যাটার্জি নামে আরো একজন মুক্তমনা–এর ব্লগার যিনি অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাস এর হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেন, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সাথেও যিনি যুক্ত ছিলেন, এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক ছিলেন I তিনি খুন হওয়ার কয়েকদিন আগেও পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ব্যর্থ হন (Nasreen, 2015) I ৭ই আগস্ট তার বাসায় ঢুকে ৬জন তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে I আনসার–আল–ইসলাম বাংলাদেশ এই হত্যার দায় শিকার করে (The Daily Star, 2015)I
.
অভিজিৎ রায়ের বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী লেখা ‘বিশ্বাসের ভাইরাস‘ প্রকাশনার জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা ফয়সাল আরেফিন দীপনকে ৩১শে অক্টোবর তারই প্রকাশনা রুমে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় (BBC News, 2015)I একইদিনে শুদ্ধস্বর প্রকাশনার মালিক আহমেদ রশিদ চৌধুরী চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত হন যার দায় স্বীকারকরে নেয় আনসার–আল–ইসলাম বাংলাদেশ I উল্লেখ্য যে সে বছরই ফেব্রুয়ারিতে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় I ৩১ শে অক্টোবর রণদীপন বসু ও তারেক রহমান নামের আরো ২জন লেখক অন্য প্রকাশনাতে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় I
.
শিশু– কিশোরদের অসংখ সাইন্স–ফিক্শন বইয়ের রচয়িতা, স্বনামধন্য সাহিত্যিক ডক্টর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, যিনি সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক I তিনি ২০১৮ সালের ৩মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন ছুরিকাঘাতে আহত হন I ২০১৬ সালে একটি মোবাইল বার্তায় তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পান I এছাড়াও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী হওয়ায় ২০১৩ সালের ২ মার্চ জগৎজ্যোতি তালুকদার ও ৯ই ডিসেম্বর গণিত প্রভাষক জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবুকে হত্যা করা হয় I যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক, ধর্ম নিরপেক্ষ ও স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের দিকেই শুধু চাপাতি উঁচিয়ে এইসব মানবিক নীতিহীন উগ্র ধর্মীয় মতাদর্শীরা ক্ষান্ত হয়নি, এরপর এদের লক্ষবস্তু হয় ধর্মভিত্তিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গন্যমান্য ব্যক্তিরা I
.
বাংলাদেশের একজন ইসলামী পন্ডিত, নাম নুরুল ইসলাম ফারুকী, ২০১৪ সালে ২৭ শে আগস্ট নিজ বাসায় কিছু দুর্বৃত্তের দ্বারা খুন হন I চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নার্সিং বিভাগের শিক্ষিকা অঞ্জলি দেবী চৌধুরী ২০১৫ এর ১০ই জানুয়ারি পথিমধ্যে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি কোপের মুখে নিহত হয় I জীবিকা নির্বাহের জন্য বাংলাদেশে বসবাসরত একজন ৬৬ বছর বয়সী জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি, ঘাতকদের করা তিনটি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় I ইরাকের ইসলামিক স্টেট এই হত্যার দায় স্বীকার করে নেয় তবে তাদের ভাষ্য মতে, কুনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এটা তারা জানতো না তাই তাদের হিসাবে ভুল হয়েছে I
.
২০১৬ সালে যোগেশ্বর রায় নামের একজন হিন্দু পন্ডিতকে শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করে ইসলামিক স্টেট নামক একটি জঙ্গি সংঘঠন । এক মাস পরেই এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিক নামের রাজশাহী বিশবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক গুপ্তঘাতক দ্বারা খুন হন (Alarabiya News, 2016) । ঠিক দুইদিন পরেই বাংলাদেশের এলজিবিটি পত্রিকা ‘রূপবান‘- এর সম্পাদক ও ইউএসএইডের একজন কর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তার বন্ধু তনয় মজুমদার নিজ ফ্ল্যাটে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। ইরাকের ইসলামিক স্টেট এই হত্যার দায় স্বীকার করে (Fox News, 2016)। এর চারদিন পর নিখিল জোয়ার্দার নামের একজন হিন্দু দর্জি মৌলবাদীদের আক্রমণে নিহত হয় তৎক্ষণাৎ যার দায় স্বীকার করে নেয় ইসলামিক স্টেট (Alarabiya News, 2016)। ৭ই মে সূফীসাধক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে এবং ১৬ই মে বৈদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভিক্ষু, মাওঅং সু ইউ চ্যাক খুন হন। ২০শে মে মীর সানাউর রহমান নামের একজন হোমিওপ্যাথির ডাক্তার, যিনি বিনা পয়সায় গ্রামবাসীকে সেবা দিতেন, তিনি চাপাতির আঘাতে নিহত হন এবং তার বন্ধু কুষ্টিয়া জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুজ্জামান গুরুতর আহত হন। ২৫শে মে ব্যাবসায়ী দেবাশীষ চন্দ্র প্রামানিক নিজ জুতার দোকানে খুন হয়। ৭ই জুন হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি (BBC News, 2016), ১০ই জুন নিত্তরঞ্জন পান্ডে নামক একজন সন্ন্যাসী, ১৫ই জুন একজন হিন্দু কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী, ১লা জুলাই হিন্দু–উপাসনালয়ের কর্মী শ্যামানন্দ দাস নিহত হন, সাথে আরো ২জন সনাতন ধর্মাবলম্বী গুরুতর আহত হয়। ২ই জুলাই বৈদ্ধ ধর্মাবলম্বী কৃষক মং সুই লুং মারমা গুপ্ত ঘাতক দ্বারা নিহত হয় যার দায় স্বীকার করে আইএস (উইকিপিডিয়া, 2023)।
.
অতীতে, ১৯৯২ সালে লেখিকা তসলিমা নাসরিন বইমেলায় হঠাৎ আক্রমণের স্বীকার হন, অতঃপর ১৯৯৩ সালে তার নামে ফতোয়া জারি করা হয় কারণ তিনি নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষী জীবনযাপন করতেন এবং মৌলবাদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠা নিয়ে ও তাতে সরকারের নির্লিপ্ত আচরণের তীব্র সমালোচনা করতেন। এছাড়াও তার লিখনিতে তিনি যৌনতাকে ফুটিয়ে তুলতেন। এমনকি দেশের স্বনামধন্য প্রবীণ কবি শামসুর রহমানকে তার নিজ বাসায় হত্যার পরিকল্পনা করে হরকত–উল–জিহাদ–আল–ইসলাম নামের জঙ্গি সংঘঠন। দেশের আরেকজন স্বনামধন্য ধর্ম নিরপেক্ষ লেখক ও সমালোচক হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলায় দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে আহত হন, কারণ তিনি ২০০৩ সালে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামের নামে সমালোচনামূলক বই লেখেন এবং তারপরই প্রচুর হত্যার হুমকি পান। তবে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও ২০০৪ এর ১২ই আগস্ট জার্মানিতে নিজ বাসস্থানে মৃত্যুবরণ করেন যা তার পরিবারের ধারণানুযায়ী বইমেলায় প্রাণনাশের চেষ্টারই প্রতিফলন (উইকিপিডিয়া, 2023) (Shuvo, 2021)।
.
যদি কারো মস্তিষ্কে নিজের চিন্তাধারা প্রবাহিত করতে চান তবে এমন মস্তিষ্ক নির্ধারণ করুন যা যুক্তিবাদী নয়, যা জ্ঞানসমৃদ্ধ নয়, অনেক সহজেই যাকে প্রভাবিত করা যায়। জঙ্গিরাও ধর্মীয় অন্ধত্ব এমন সব মস্তিষ্কে ঢেলে দেয়, যাদের সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান নেই, যারা যুক্তিবাদী বা বাস্তববাদী নয়, যাদের চিন্তাধারা বিজ্ঞানের দ্বারা প্রভাবিত নয়। জ্ঞানী, যুক্তিবাদী, বাস্তবাদী ব্যক্তিকে সহজেই যে কেউ নিজের কথায় গলাতে পারে না, আর এইসব লোকেরাই যুক্তিভিত্তিক তর্কের দ্বারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যতক্ষণ মনোপুত ব্যাখ্যা না পাবে ততক্ষন কর্ণপাত করবে না। এই সব ব্যক্তিরা সব সময়ই পরাধীনতার পরিপন্থী, এদের অধীনতার মধ্যে আনতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। আর এইসব ব্যক্তিরা কোনো অন্যায় চাপের মুখে হার মানে না, শেষ পর্যন্ত ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করে যায়। মুক্তচিন্তাকে অধীনতায় আনা নিতান্তই অসম্ভব তাই যেটা সম্ভব ও যেটা সহজ সেটা হলো মুক্ত চিন্তাকেই নাশ করে দেয়া, যে মস্তিষ্ক মুক্ত চিন্তায় ভরপুর তাকে শেষ করে দেয়া, আর ধর্মের এই ভন্ড বাহকরা ঠিক তাই করছে। যে মস্তিষ্ক গুলো গ্রাস করা সহজ তাদের গ্রাস করে নিচ্ছে কিন্তু যেগুলো সহজ নয় সেগুলোকে নাশ করে দিচ্ছে।
.
যারা বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে অন্যায়ের কালো অন্ধকার থেকে নিজে বেরিয়ে আসতে ও আরো অন্যদেরও বের করতে সক্ষমতা রাখেন তাদের সবসময়ই সবার আগে নাশ করে অন্যায়ের পক্ষের শক্তিরা, ঠিক যেমন বাংলাদেশকে নিজের অধীনে না নিতে পেরে হারের মুখে পাকিস্তানিরা বাংলার বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিদের প্রাণহরণ করে ফেলে রেখে যায়, কারণ ওরা জানতো ওরা ধর্মের বিষাক্ত বীজ বপন করে দিয়ে গেছে বাংলার মাটিতে আর রাজাকার রুপি ওদের পাচাটা ক্রীতদাস রেখে গেছে সেই বীজের দেখভালের জন্য। ভালো গাছ আর আগাছার মধ্যে তফাৎ করতে পাড়ার মতো যারা বুদ্ধি রাখে তাদের ওরা ছেটে দিয়ে গেছে যেন আগাছা গুলো নির্দ্বিধায় বড় হয়ে পুরো বাংলাকে দখল করতে পারে। ওরা ভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মানুষকে এক কাতারে নেমে বাঙালিত্ব উদযাপন করতে দিবে না, ওরা বাংলাকে ইসলাম ধর্মের রীতিতে চালাতে চায় যে বাংলার জন্য প্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করে গেছে ও যাচ্ছে অনেক হিন্দু, খ্রিস্টান, বৈদ্ধ ও নানা জাতের লোক। নিজেদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব মনে করা এইসব মনুষ্যরূপী হিংস্র, রক্ত খেকো, মগজ খেকো জানোয়ারদেড় হাতে বলি যাচ্ছে বাংলার উজ্জ্বল ভবিষতের ধারক ও বাহকেরা যারা দেশকে, মনুষত্বকে ভালোবাসতো, যারা নিজেদের মেধা, জ্ঞান, বুদ্ধি দিয়ে দেশকে অসম্প্রদায়িকতার, নিরপেক্ষতার, মানব ধর্মের পথে, আলোর পথে চালাতে পারতো। আলোর পথের যাত্রীদের ওরা বিনাশ করে দিয়ে এই দেশকে পৈশাচিক ধর্মান্ধতার অন্ধকারে ঢেকে দিচ্ছে আর ঘরে ঘরে বিলিয়ে দিচ্ছে বেহেস্তে যাবার সস্তা টিকিট।
References
Ahmed, S., 2015. Ananta Bijoy Das: Yet another Bangladeshi blogger hacked to death, s.l.: CNN.
Alarabiya News, 2016. Bangladesh Sufi Muslim killed in suspected Islamist attack, Dhaka: Alarabiya News .
Alarabiya News, 2016. ISIS claims killing of Hindu man in Bangladesh, New Delhi: Alarabiya News.
BBC News, 2015. Bangladeshi secular publisher hacked to death, s.l.: BBC News.
BBC News, 2015. Death for Bangladesh blogger killers, s.l.: BBC News.
BBC News, 2015. ‘Nowhere is safe’: Behind the Bangladesh blogger murders, s.l.: BBC News.
BBC News, 2016. Bangladesh Hindu priest murdered by militants, s.l.: BBC News.
Chowdhury, A. & Shams, S., 2015. Freedom of expression, s.l.: DW Made for Minds.
Dearden, L., 2015. American-Bangladeshi atheist blogger Avijit Roy hacked to death by suspected Islamist extremists, s.l.: Independent.
Fox News, 2016. Editor of Bangladesh’s first gay rights magazine stabbed to death, s.l.: Fox News.
Islam, A., 2013. Crackdown on ‘blasphemy’, s.l.: DW Made for Minds. .
Nasreen, T., 2015. Why I blame Sheikh Hasina for Niloy Neel’s death, s.l.: Daily O.
Prothom Alo, 2015. Ansar Bangla-7 claims Avijit killing responsibility, Dhaka: Prothom Alo.
Shuvo, S., 2021. Bangladeshi freethinkers are never safe. Freedom From Religion Foundation , 38(2).
The Daily Star, 2015. Blogger killed once again, s.l.: The Daily Star.
The Straits Times, 2014. Bangladesh professor who pushed for ban on full-face veils hacked to death: police, s.l.: The Straits Times.
ইনসাইড বাংলাদেশ, ২০১৯. বাংলাদেশে যত জঙ্গি সংগঠন, s.l.: ইনসাইড বাংলাদেশ.
ইসলাম, স., ২০২৩. মুসলিম মিল্লাত বাহিনী থেকে জেএমবি–বাংলাদেশ জঙ্গি কার্যক্রম শুরু যেভাবে, s.l.: বিবিসি নিউজ বাংলা.
উইকিপিডিয়া, 2023. বাংলাদেশে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণ. [Online]
Available at: https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87_%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80_%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%
[Accessed 1 September 2023].
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ২০১৪. বাংলাদেশে ৪০টি জঙ্গি সংগঠন রয়েছে!, s.l.: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.
সুলতান, ট., ২০২১. তিন জঙ্গিগোষ্ঠীর দুটি চলে বিদেশ থেকে, ঢাকা: প্রথম আলো.
হীরা, র. ক., ২০১৬. এখনো সক্রিয় ২০ জঙ্গি সংগঠন, s.l.: প্রতিদিনের সংবাদ .
.
.
.
23 Responses
বাংলাদেশে খারাপ কাজ রযেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ কাজ হলো এটি।আর এটার উৎপাত নাস্তিক ব্লগার দের কাছ থেকে।।এদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
ধর্ষকরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কলংকজনক।
ধর্ষক বাহাউদ্দিনের উচ্চতর শাস্থি চাই।
ধষকদের শাস্তি না হলে সবাইকে নিয়ে এক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলা হবে।
মা মাটির দেশ বাংলাদেশ এই দেশ এরকম ঘটনা ঘটলে চলবে না। এর পরিএান চাই।
একটি স্বাধীন দেশ হয়ে একের পর এক ঘটনা চলবে না।
বাংলাদেশ থেকে ব্লগার নাস্তিকদের এরকম কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।
আমি মনে করি নাস্তিক ব্লগারদের কারণে এরকম ঘটনা ঘটছে।
এই ফরহাদ নাস্তিক ও কুলাংগার বাচ্চা একে অপহরণ করায় ভালোই হয়েছে।তোকেই এই ভাবে অপহরণ করা হবে
ফরহাদ অপহরণ করায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।অনতি বিলম্বে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হউক।
এই নাস্তিক ফরহাদকে আজ অপহরণ করা হয়েছে কাল তোকে অপহরণ করা হবে।
এই নাস্তিক এর বাচ্চা তোই নাস্তিক আরেক নাস্তিক এর অপহরণ এর খবর দিচ্ছিস।নাস্তিক ব্লগার এর বাচ্চা।
এই কুওার বাচ্চা তোকেও একদিন অপহরণ করে কেটে কেটে টুকরো করা হবে।
সব নাস্তিক ব্লগারদের এই ভাবে অপহরণ করে কেটে ফেলা ভালো এতে দেশ অনেকটা শান্তি হবে।
ফরহাদের অপহরণকারীদের খুজে শাস্তি আওতায় আনা হউক।
তোকেও আমি এইভাবে অপহরন করে কুওার মতো মারবো।
নাস্তিক ব্লগারদের কোথাও টাই নেই।
যারা ধমের উপর আঘাত হানে তাদের এই পৃথিবীতে টাই নেই।
এই নাস্তিক এর বাচ্চা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লিখতে তোর ভয় করে না।
আমাদের বাংলাদেশের রাষ্টধম ইসলাম।কিন্তু আমাদের দেশে মুসলিম নামের কিছু নাস্তিক ব্লগার আছে যারা আমাদের ধমের বিরুদ্ধে আঘাত হানছে।তাদেরকে এই পৃথিবী থেকে ধংস্ব করে দিলে ভালো হয়।
আমাদের বাংলাদেশের রাষ্টধম ইসলাম।কিন্তু আমাদের দেশে মুসলিম নামের কিছু নাস্তিক ব্লগার আছে যারা আমাদের ধমের বিরুদ্ধে আঘাত হানছে।তাদেরকে এই পৃথিবী থেকে ধংস্ব করে দিলে ভালো হয়।
নাস্তিক ব্লগারদের কারনে আজ আমাদের রাষ্টধম ধংস্বের মুখে।
নাস্তিক ব্লগারদের কারণে আজ আমাদের রাষ্টধম ধংস্বের মুখে।